কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল পুরো পশ্চিমবঙ্গ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলেব্রিটি ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে তৈরি হয় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবিতে বিজেপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে চাপে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী।
আন্দোলনের রেশ ছড়ায় পুরো রাজ্যে। অনেকেই ধারণা করছিলেন, এই ঘটনার প্রভাব পড়বে উপনির্বাচনেও। তবে শনিবার ঘোষিত পশ্চিমবঙ্গের ৬টি আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা। কোচবিহার, উত্তর-২৪ পরগণাসহ সবগুলো আসনেই বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে মমতা ব্যানার্জির দল। একাধিক আসনে ৫০ থেকে ৭৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল। যেখানে বিজেপি ও বামফ্রন্ট মিলে ৩০ শতাংশের ঘরেও পৌঁছাতে পারেনি।
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এমন জয় সম্ভব হলো? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রামাঞ্চলে মমতার নেয়া বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প বড় ভূমিকা রেখেছে। "কন্যাশ্রী" ও "রূপশ্রী"র মতো প্রকল্পগুলো ভোটারদের দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। ফলে শহরের আর জি কর আন্দোলন গ্রামীণ ভোটারদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
তবে বিজেপির কৌশলগত দুর্বলতাও তৃণমূলের জয়ের পেছনে বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, স্থানীয় ইস্যুতে মনোযোগ না দেয়া এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিজেপি ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
তৃণমূলের এই জয়ের পেছনে ভোট কারচুপির অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেউ কেউ। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের ‘ভয় দেখানোর রাজনীতি’ এবং প্রশাসনিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফল নিজেদের পক্ষে নিয়েছে মমতার দল। যদিও তৃণমূল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রমাণ করেছে, মমতা ব্যানার্জি এখনো পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে বিরোধী দলগুলো যদি তাদের সাংগঠনিক ও কৌশলগত ভুল শুধরে না নেয়, তাহলে ভবিষ্যত নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।